‘Film Noir’ – নতুন স্বপ্ন দেখানো নান্দনিক প্রোডাকশন হাউজ

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

সম্প্রতি আয়োজিত ব্লেন্ডার চয়েস ওটিটি অ্যাওয়ার্ডে মোট আটটা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জয় করে দেশীয় কনটেন্ট নির্মানের অন্যতম শক্তিশালী এবং নন্দিত হাউজ হিসেবে নিজেদের নাম সামনে নিয়ে এসেছে Film Noir… আমাদের দেশেও একটা সময় চলচ্চিত্র নির্মান করে বেশকিছু প্রোডাকশন হাউজ আলোচনায় এলেও এখন সেই সংখ্যাটা একদমই হাতেগোনা। তবে এই সময়ে এসে চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ফিকশন ( টিভিসি, ওভিসি, নাটক, টেলিফিল্ম, ওটিটি কনটেন্ট) রিলেটেড বেশকিছু প্রোডাকশন হাউজ নিজেদের ব্যতিক্রমী এবং সাড়া ফেলে দেয়া কনটেন্ট এর মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসার পাশাপাশি সাধারণ দর্শকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। তেমনই এই সময়ের একটি সফল এবং প্রশংসিত হাউজ হচ্ছে ‘Film Noir’ ( ফিল্ম নোয়া)…

দুই বাংলায় সাড়া ফেলা ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’ এর অসাধারন জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। সৈয়দ আহমেদ শাওকির এই নান্দনিক ওয়েব সিরিজের কাধে ভর করে পাঁচটি পুরস্কার নিজেদের ঘরে তুলে নেয় Film Noir। সেরা সিরিজ, সেরা অভিনেতা, সেরা পার্শ্ব অভিনেতা, সেরা কস্টিউম, সেরা সিনেমাটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জয় করে এই হাউজটি। ‘তাকদীর’ এর নাম ভূমিকায় চঞ্চল চৌধুরী এবং ‘ভাইছা’ খেতাব পাওয়া সোহেল মন্ডল সেরা অভিনেতা এবং পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। সেরা কস্টিউমের পুরস্কার পান ইডিলা ফরিদ তুরিন। সেরা সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে বরকত হোসেন পলাশও পুরস্কার করে নেন নিজের নামে। সাথে সেরা সিরিজের পুরস্কার তো আছেই।

এছাড়া বছরের অন্যতম জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত অ্যান্থোলজিক্যাল সিরিজ ‘জাগো বাহে’ এর ‘লাইট, ক্যামেরা অবজেকশন’ এর জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী, সেরা এডিটরের পুরস্কার জয় করেন যথাক্রমে অর্পনা ঘোষ এবং সালেহ সোবহান অনীম। অন্যদিকে একই সিরিজের ‘বাংকার বয়’ নামক ফিকশনের জন্য সেরা পরিচালক ( সমালোচক) শাখায় সুকর্ণ শাহেদ ধীমান পুরস্কার লাভ করে।

Film Noir এর যাত্রা শুরু ২০১৩ সালে। সৈয়দ আহমেদ শাওকি, সালেহ সোবহান অনীম, রেহমান সোবহান সনেট এবং হাসনাইন তাসলিম এই চারজন ব্যক্তির হাত ধরে গড়ে উঠা ‘Film Noir’ এই সময়ে এসে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নান্দনিক এবং বৈচিত্র‍্যময় ফিকশন নির্মানের এক পাওয়ার হাইজ বললেও ভুল হবেনা। এই চারজন ফাউন্ডার মেম্বারের পাশপাশি সময়ের সাথে সাথে এই প্রোডাকশন হাউজে যুক্ত হওয়া বরকত উল্লাহ পলাশ, সাদ বিন হোসেন, নেয়ামত উল্লাহ মাসুম, নওশীন সারোয়ার, সাইফুল ইসলাম খান,দোহা রাফি, মশিউর রহমান, কামরুল হাসান শাকিল, নিশাত জাহান নাফিজা, এহসানুল কবীর, মেহেদী হাসান খানের মতো বেশকিছু তরুন এবং দক্ষ ব্যক্তিদের পদচারণায় ‘Film Noir’ একের পর এক ভিন্নধর্মী কনটেন্ট নিয়ে হাজির হচ্ছে আমাদের সামনে।

আরেকটি মজার ব্যাপার হলো এই সময়ে এসে যখন তারকারা তো বটেই সাধারণ মানুষের মাঝেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের লাইফস্টাইল সহ কাজের মাধ্যমের নানা বিষয় ভক্তদের সাথে শেয়ার করা সহ নানা বিষয়েই ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করার একটা প্রবনতা লক্ষ্য করা যায় সেখানে ‘Film Noir’ এর প্রতিটা ব্যক্তিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনিয়মিত তো বটেই এমনকি লাইট,ক্যামেরা এবং অ্যাকশনের সাথে জড়িত এই মানুষগুলো নিজেদের কিছুটা লুকিয়ে রাখতেই যেনো পছন্দ করেন। তাহলে কি চুপিসারে নিজেদের সেরাটাই দর্শকদের কাছে পৌছে দেবার একটা নিয়মেই নিজেদের লুকিয়ে রাখছেন এই গুণী মানুষগুলো!!

‘Film noir’ তাদের যাত্রার শুরু থেকেই বিভিন্ন শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি, ফিচার ফিল্ম, টিভি ফিল্ম এবং মিউজিক ভিডিও নির্মাণে নিজেদের ভিন্নধর্মী চিন্তা, নির্মানে বৈচিত্র্যময়তা নিয়ে একটি টিম হিসেবে আলাদা একটা স্বতন্ত্রতা তুলে ধরেছেন বরাবরই। ‘প্রজন্ম টকিজ’ থেকে ‘কথা হবে তো’, ‘ইতি তোমারই ঢাকা’,‘ ঊনলৌকিক’, ‘তাকদীর’, ‘জাগো বাহে’ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে মাইলফলক স্পর্শ করা ওয়েবসিরিজ ‘কারগার’ এর প্রথম কিস্তি এই প্রোডাকশন হাউজের নান্দনিকতার বিকল্প নাম হিসেবেই এখন পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে সাধারণ বিনোদনপ্রেমী দর্শকদের কাছে।

আরেকটি বিষয় যা উল্লেখ না করলেই নয় সেটা হলো ওটিটির এই সোনালি সময়ে ‘Film Noir’ তাকদীর, ঊনলৌকিক, জাগো বাহে, কারাগার এর মতো ব্যাক টু ব্যাক সফল এবং নান্দনিক প্রোডাকশন উপহার দিয়েছে। চঞ্চল চৌধুরী অবশ্যই গুণী এবং শক্তিশালী অভিনেতা তবে দুই বাংলার মানুষের কাছে তার ভার্সেটাইলিটি উঠে এসেছে তাকদীর এবং কারাগারের মাধ্যমে। সোহেল মন্ডল আজ ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম আস্থাশীল অভিনেতা কিন্তু তাকদীর’ এর মন্টু চরিত্রটি না হলে এই আস্থার জায়গাটা তৈরী হতে আরো সময় লাগতো হয়তো। আবার অভিনেতা হিসেবে ইন্তেখাব দিনারের পূর্ণজন্মই হয়েছে ঊনলৌকিক এর মাধ্যমে। এফএস নাঈমও কারাগার এর মাধ্যমেই যেনো জ্বলে উঠলেন নতুন করে। একই কথা বলা যায় নতুন কিন্তু প্রতিভাবান আবদুল্লাহ আল সেন্টুর ক্ষেত্রে ‘বাংকার বয়’ এর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য।

একটি শক্তিশালী টিম এবং নবীন ও প্রবীন গুণী অভিনয় শিল্পীদের সাথে নিয়ে একের পর এক ব্যতিক্রমী আর ভিন্নধর্মী কনটেন্ট নিয়ে ‘Film Noir’ এর যে পথচলা চলছে সামনের দিনে তা আরো বেশি প্রশংসনীয় এবং বৈচিত্র‍্যময়তা লাভ করবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। স্বীকৃতি হিসেবে ব্লেন্ডারস চয়েস ওটিটি অ্যাওয়ার্ডে এতোগুলো শাখায় পুরস্কার জয় অবশ্যই সামনের দিনে তাদের পদচারণায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে। শুভ কামনা রইলো মান বজায় রেখে নান্দনিক কনটেন্ট উপস্থাপন করে আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করা ‘Film Noir’ এর জন্য….

Ad