দেড় দশক ধরে মুগ্ধতা ছড়ানো অনবদ্য মম

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

গড়পড়তা ট্রেন্ডিং জনপ্রিয়তা বা আলোচনা বলতে যা বোঝায় তাকে নিয়ে তেমনটা দেখা না গেলেও এই সময়ে দাঁড়িয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে শক্তিশালী অভিনয় দক্ষতা দিয়ে ভার্সেটাইল অভিনেত্রীর লিস্টে তিনি থাকবেন একদম উপরের দিকে। প্রায় দেড় দশকের ক্যারিয়ারে তিনি কাজ করেছেন বহুমাত্রিক চরিত্রে। যার কথা লিখছি তিনি সবার প্রিয় অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। আজ দেশের এই জনপ্রিয় এবং আলোচিত অভিনেত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে এই বিশেষ ফিচার।

২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার বিজয়ী মম ২০০৭ সালে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনেত্রী হিসেবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে পথচলা শুরু করেন। প্রথম চলচ্চিত্রে জরী হিসেবে আর অসাধারণ অভিনয় দিয়ে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে নেন। এরপরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে যাবার। টেলিভিশন নাটকে একটা দীর্ঘ সময় জনপ্রিয়তা এবং প্রশংসা নিয়ে কাজ করে গেছেন। মাঝে মাঝে কিছু আলোচিত সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন যা অভিনেত্রী হিসেবে মম’র ক্যারিয়ারে সাফল্য এবং বৈচিত্র‍্যময়তার পালক যোগ করেছে। ২০১৫ সালে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবিতে অভিনয় করে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের দর্শক জরিপ ও সমালোচক শাখায় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করে রীতিমতো চমকে দেন তিনি। আলতাবানু, দহন, স্ফুলিঙ্গ, আগামীকাল এর মতো প্রশংসিত সিনেমাতেও দেখা মিলেছে তার। সামনেই রিলিজ পাচ্ছে খিজির হায়াত খানের বহুল প্রতীক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘ওরা ৭ জন’। এছাড়া ‘রূপকথা নয়’ নামের একটি সিনেমাতেও দেখা মিলবে মমর। তবে বরাবরই ভিন্নতা আছে এমন গল্প ও চরিত্রকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন তিনি। তাই গৎবাধা গল্প বা গতানুগতিক ধারায় কাজ করেন নি কখনোই।

নাটকের জগতে একটা সময় চুটিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ভালোনাসার গল্পে ‘নীলপরি নীলাঞ্জনা’ নিঃসন্দেহে মমর একটি ট্রেডমার্ক কাজ। সোলমেট, রূপকথা এখন আর হয়না, ফুলমতি, অক্ষয় কোম্পানির জুতা, স্বর্নমায়া, ভাঙন, আশ্রয়, আর্বত, ভালোবাসার পঙক্তিমালা, মুগ্ধ ব্যকরণ, কাঁচের পুতুল, মিম ফ্যাশন এন্ড বিউটি, গরম ভাতের গন্ধ’র মতো আলোচিত এবং জনপ্রিয় নাটকে দেখা গেছে মমকে।

জাকিয়া বারী মম অভিনেত্রী হিসেবে কতোটা গুণী এবং দক্ষ তা নতুন করে বলার বা প্রমাণের কিছু নাই তবে তাকে ভেবে সেই অর্থে কাজ হয়নি যেটা অবশ্যই দুঃখজনক। ব্যক্তি জীবন এবং পেশাগত জীবন আলাদাভাবে মেইনটেইন করা এই চমৎকার অভিনেত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্য এবং নাট্যতত্ত্ব বিভাগে ২০১০ সালে স্নাতক আর ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর কমপ্লিট করেছেন। তবে একথা বলা যায় নিঃসন্দেহে যে, এই শক্তিশালী অভিনেত্রীকে আমরা নতুন করে খুঁজে পেয়েছি ওটিটির কল্যানে।

বাংলাদেশের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে রীতিমতো পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। তাই এক্সপেরিমেন্ট করার একটা সুযোগ এখন গল্পকার, নির্মাতা এবং অভিনয় শিল্পীদের সামনে। যে কয়জন অভিনেতা এবং অভিনেত্রী এই নতুন কনটেন্ট নির্ভর মাধ্যমে নতুন ভাবে জ্বলে উঠেছেন মম তাদের মধ্যে অন্যতম। মহানগর, কন্টাক্ট, রিফিউজি, ৯ এপ্রিল, বিলাপ প্রতিটি কনটেন্টেই মম নিজের জাত চিনিয়েছেন নতুন করে।

 

বাবা মজিবুল বারী ও মা আয়েশা আক্তারের সাথে মমর শৈশব কাটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে নাচ শেখেন তিনি। প্রথম টেলিভিশনে আবির্ভূত হন ১৯৯৫ সালে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় নতুন কুড়ি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করেন। এরপর লম্বা বিরতির পরে ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা। মম প্রতিনিয়ত নিজেকে ঝালাই করে নিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন গল্প আর চরিত্রে যার প্রমাণ তার সাম্প্রতিক কালের কাজগুলো।

টেলিভিশনে এখন কম কাজ করলেও বাছাই করা চলচ্চিত্র এবং ওটিটি কনটেন্টে ব্যস্ত সময় পার করা এই অভিনেত্রীকে সামনে দেখা যেবে বেশকিছু ফিকশনে। এই গুণী অভিনেত্রীকে নিয়ে আমাদের দেশের নির্মাতা এবং গল্পকারেরা সামনের দিনে আরো নতুন নতুন চরিত্র এবং গল্পে হাজির করবেন সেটাই প্রত্যাশা। তেমনি জাকিয়া বারী মমও তার সহজাত অভিনয় প্রতিভার সাক্ষর রেখে যাবেন আগামী দিনগুলোতে তেমনটাই কাম্য।

Ad