ঢাকাই সিনেমার নতুন অ্যাকশন হিরো আদর আজাদ

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

এই ঈদে রিলিজ পাওয়া আলোচিত সিনেমা ‘লোকাল’ এর ট্রেলার সামনে আসার পর থেকেই অভিনেতা আদর আজাদ লাইমলাইট নিজের দিকে টেনে নিয়েছিলেন অনেকটাই। সিনেমা রিলিজের আগে কিছুটা সংশয় অনেকের মাঝে থাকলেও রিলিজের পরে দেখা গেলো হতাশ করেননি বানিজ্যিক সিনেমার নায়ক আদর আজাদ। ড্যাসিং লুক, অ্যাকশন দৃশ্যে পারদর্শীতা, ফিটনেস এবং সংলাপ ডেলিভারি প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেই পাস মার্কস পেয়ে বেশ ভালোভাবেই উতরে গেলেন আদর আজাদ। এমনকি অনেকদিন পরে ঢাকাই সিনেমায় একজন অ্যাকশন হিরোর আগমনী বার্তা যেনো জানিয়ে গেলো সাইফ চন্দন পরিচালিত ‘লোকাল’ এর মধ্য দিয়ে। আজ তার জন্মদিন উপলক্ষে এই বিশেষ ফিচার….

২০১৪ সালে ‘ইমামি ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন আদর আজাদ। এরপর থেকে মোটামুটি নিয়মিতভাবেই মিডিয়া অঙ্গনে কাজ করে চলেছেন তিনি। করোনা পরিস্থিতিতে কিছুটা সময় থমকে থাকার পরে অন্য সব সেক্টরের মতো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি গতবছর কিছুটা ঘুরে দাড়ালে যে কয়জন তরুন অভিনেতা বেশকিছু সিনেমায় একের পর এক কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম নাম আদর আজাদ।

‘তালাশ’, ‘লাইভ’ এবং ‘যাও পাখি বলো তারে’ নামের তিনটি সিনেমায় আদর আজাদকে দেখা গেলেও ইন্ডাস্ট্রির বানিজ্যিক সিনেমার চিত্রনায়ক হিসেবে অতোটা আলোচনায় আসেননি তিনি যতটা আসার কথা!!! তবে সাইফ চন্দনের ‘লোকাল’ সিনেমায় আদর আজাদকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে কতোটা দারুণ ভাবে গড়ে তুলেছেন আদর সেটা এই সিনেমাটি যারাই দেখেছেন তার প্রত্যেকেই মুগ্ধতার কথাই জানিয়েছেন। রাফ এন্ড টাফ লুক, নায়কোচিত বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, অ্যাকশন দৃশ্যে পারদর্শীতা, চিত্রনায়িকা বুবলীর সাথে চমৎকার রসায়ন, ডায়লগ ডেলিভারি সহ প্রতিটা সিনেই তার মধ্যে একটা ড্যাশিং হিরো ব্যাপার উঠে এসেছে পুরোপুরিভাবে। এমনকি অনেকে ভারতীয় সাউথ ঘরানার হিরোদের মতো লেগেছে আদর আজাদকে বলেও মন্তব্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই আলোচনায় ছিলো যে, আদর আজাদ হচ্ছেন বাংলাদেশের ‘রকি’। তার সোয়াগ এবং রাফ এন্ড টাফ উপস্থিতি ঢাকাই চলচ্চিত্রে নতুন এক অ্যাকশন হিরোর আগমনী বার্তাই দিয়ে গেলো আমাদের……

ছোট থেকেই এই রূপালি জগতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন আদর আজাদ। হোটেল ম্যানেজমেন্টে গ্রাজুয়েশন করা আদর আজাদ তাই সবসময় শোবিজে কাজের সুযোগ খুঁজেছেন। আদরের ভাষ্যমতে, ‘নব্বই দশকে যখন বিটিভিতে বিকেলে সিনেমা দেখতাম তখন পর্দার নায়ককে দেখে নিজের মতো কল্পনা করতাম। তখন থেকে ফিল্মে দুর্বলতা আসে। তাছাড়া আমি ছোট থেকেই স্টেজে গান বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জড়িত ছিলাম। সেই ছোট ছোট স্বপ্নগুলো আজ অনেকটাই সত্যি হয়েছে। সামনের দিনেও এভাবেই সবার ভালোবাসা নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চাই আমি”….

সামনে বেশকিছু ভিন্ন ভিন্ন জনরার সিনেমাতে দেখা যাবে আদর আজাদকে। মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্য’ সিনেমার কাজ শেষ করেছেন তিনি। ইয়াসির আরাফাত জুয়েল পরিচালিত ‘চিৎকার’ সিনেমার শ্যুটিং শেষ। বজলুর রাশেদ চৌধুরী পরিচালিত ‘পোড়া অন্তর’ নামের আরো একটি সিনেমাতে দেখা যাবে আদরকে। ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত আরেকটি বিগ বাজেটের সিনেমা ‘মুক্তি’তেও দেখা মিলবে আদর আজাদের। অ্যাকশন ঘরানার এই সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। তরুণ নির্মাতা আলোক হাসান এর পরিচালনায় ‘নাকফুল’ সিনেমাতেও ভিন্নধর্মী একটি চরিত্রে হাজির হবেন আদর আজাদ।

তেমন কোনো সাপোর্ট ছাড়া অল্প সময়েই নিজের পরিশ্রম, দক্ষতা এবং নিজেকে এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠিত করার অবিচল লক্ষ্য ধারণনকরা আদর আজাদ আজ পরিচিতি পেয়েছেন সাধারণ দর্শকদের মাঝে যা প্রশংসার দাবিদার। কোনো এক গন্ডি বা জনরায় আটকে না থেকে রোমান্টিক, থ্রিলার, অ্যাকশন প্রায় সব ধরনের বানিজ্যিক সিনেমাতেই তিনি অভিনয় করছেন। এই সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে অভিনেতা হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে আদর আজাদের যাত্রাপথ সফলতার সাথেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে একথা বললে ভুল হবেনা। শুভ কামনা রইলো এই নবীন এবং সম্ভাবনাময় এই পরিশ্রমী অভিনেতার জন্য।

 

Ad