সেন্সরের কাঁচিতে আটকে যাওয়া সিনেমা
আফজালুর ফেরদৌস রুমন
আমাদের দেশের সেন্সর বোর্ড এর সদস্যদের মনমর্জি বোঝা আসলেই দুস্কর। কারন অনেক সময়েই অজ্ঞাত নানা কারনে এমন এমন সিনেমা সেন্সর থেকে আটকে দেয়া হয় যেগুলোতে আদতে আটকানোর মতো কোনো কিছু নাই। ‘সিনেমা সমাজের প্রতিচ্ছবি’ এই লাইনটা একটা সময় প্রবাদ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও সোনালী দিনের সাথে সাথে এটি হারিয়ে গেছে অজান্তেই।
শুন্য দশকে অশ্লীল, কাটপিস থাকা সিনেমার অবাধ মুক্তির কথা বাদ দিলেও এই আধুনিক সময়ে এসে কেনো বাস্তব ঘটনার আলোকে নির্মিত সিনেমা মুক্তিতে বাধ আসবে সেটার উত্তর কে দিবে কে জানে। বিশেষ করে কিছু সিনেমাতে রাস্ট্রের বিরুদ্ধে যেয়ে বা সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এমন কোনো কিছুর উপস্থিতি না থাকলে মিলছেনা সেন্সর৷ এই লিস্টে চারটি আলোচিত সিনেমা হচ্ছে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’, কামার আহমেদ সাইমনের ‘অন্যদিন’, সাজ্জাদ খানের ‘কাঠগোলাপ’ এবং সম্প্রতি সেন্সরের কাঁচিতে আটকে পড়া রায়হান রাফীর ‘অমীমাংসিত’।
মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ নির্মান করা হয়েছিলো ঢাকায় ঘটা ‘হলি আর্টিজান’ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। বিশ্বের নানা দেশে সত্য ঘটনা অবলম্বন করে সিনেমা বানানো হলেও আমাদের দেশে এই সিনেমাটি রিলিজ দেয়া হচ্ছেনা।
আবার বেশকিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে একাধিক পুরস্কার জেতা সাজ্জাদ খানের ‘কাঠগোলাপ’ মুক্তির সনদ পাচ্ছেনা অজানা কারনে। অন্যদিকে নন্দিত নির্মাতা কামার আহমেদ সাইমনের ওয়াটার ট্রিলজির দ্বিতীয় সিনেমা ‘অন্যদিন’ সিনেমাটি লোকার্নোর পিয়াতজা গ্রান্দা, ক্যামডেন, কানের লা এতেলিয়ার সহ নানা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে, মিলেছে ভূয়সী প্রশংসাও তবুও দেশে রিলিজ দেয়া হচ্ছেনা। এই লিস্টের সর্বশেষ সংযোজন রায়হান রাফীর ‘অমীমাংসিত’। ধারণা করা হচ্ছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর হত্যাকাণ্ডের বীভৎসতা নিয়েই এই ওয়েব ফিকশন, তাই দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ ডেট ঘোষণার পরে এই ওয়েব ফিকশন প্রদর্শনের অযোগ্য বলে সেন্সর থেকে আপত্তির কারনে রিলিজ দেয়া হয়নি।
পরিশেষে এই ২০২৪ সালে এসে সিনেমার কনটেন্ট নিয়ে যদি এভাবে গল্পকার বা নির্মাতাদের আটকে থাকতে হয়, তাহলে সময়ের দাবি বলি বা দর্শকদের বদলে যাওয়া রুচির সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব সিনেমার সাথে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে আমাদের জন্য….