কাজী রিটনের পথচলা!

বিনোদন প্রতিবেদক : গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে কাজ করে চলেছেন প্রযোজক, অভিনেতা, লেখক ও পরিচালক কাজী রিটন। ২০০৮ সালে সাতটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘চন্দ্রগ্রহণ’ –এ তিনি একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। একজন অভিনেতা ও সহকারী পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি প্রযোজক ও লেখক হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেন।

তিনি চলচ্চিত্র ও নাট্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’-এর স্বত্ত্বাধিকারী। এছাড়াও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের ‘আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৮ সালে মাত্র ৮,০০০/- টাকা পকেটে নিয়ে ঢাকায় আসেন কাজী রিটন।

তিনি সে সময় অভিনয়শিল্পী হিসেবে থিয়েটারে এবং সহকারী পরিচালক হিসেবে টিভি মিডিয়ায় কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০০০ সাল থেকে ফিল্ম ও টিভি মিডিয়াতে নিয়মিত ভাবে কাজ করতে থাকেন। অভিনয়শিল্পী হিসেবে তিনি বেশ কিছু ধারাবাহিক ও টিভি নাটকে কাজ করেছেন, যেমন ’দৌড়’

(২০০৪) বিটিভি (বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশের সরকারী টেলিভিশন সংস্থা), ’বাইনোকুলার’(২০০৫) এনটিভি, ’গ্রহ কন্যা’ (২০০৬) এনটিভি, ’ব্যাচেলর দম্পতি’ (২০০৭) বাংলাভিশন, এবং ‘এ টিম’ (২০১৩) চ্যানেল আই।

এছাড়াও তিনি মডেল হিসেবে বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন, এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো একটেল (মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানী), যমুনা ব্যাংক ও বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনস। ২০০৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত পরিচালক মুরাদ পারভেজ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘চন্দ্রগ্রহণ’-এর মাধ্যমে তিনি প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয়ে পা রাখেন। এই চলচ্চিত্রটি ৭টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার, এবং অন্যান্য আরো অনেক পুরষ্কার অর্জন করে।

অভিনয়ের পাশাপাশি কাজী রিটন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ফাইভ ডট কম’-এর একজন পার্টনার হয়ে মিডিয়া জগতে প্রযোজক হিসেবে তার যাত্রা শুরু করেন। সেখানে তার অন্যান্য পার্টনারা ছিলেন অভিনয় শিল্পী বিজরী বরকতউল্লাহ ও শ্রাবন্তী, কন্ঠশিল্পী পার্থ বড়ুয়া, এবং চলচ্চিত্র ও নাট্য প্রযোজক তুহিন বড়ুয়া। এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা, ধারাবাহিক নাটক ’দ্বিতীয় জীবন’ (রচনা: আনিসুল হক, পরিচালনা: এস এ হক অলীক) ২০০৩ সালে এটিএন বাংলায় প্রচারিত হয়। সে সময় দর্শক ও সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিলো এই ধারাবাহিকটি।

এরপর কাজী রিটন বেশ কিছু জনপ্রিয় ও প্রশংসিত নাটক প্রযোজনা করেন, যেমন, ‘নায়িকার নামে নাম’ (বিটিভি), ‘এবং বিয়ে’ (ইটিভি), ‘ময়ুর বাহন’ (চ্যানেল ওয়ান), ‘খোয়াব’ (এটিএন বাংলা), ‘সোসাইটি’ (চ্যানেল ওয়ান), ‘ভালোবাসা মন্দবাসা’ (এনটিভি) ইত্যাদি। ২০০৬ সালে তিনি সহযোগী প্রযোজক হিসেবে চিত্রনায়ক রিয়াজ ও প্রযোজক তুহিন বড়ুয়ার সাথে যৌথভাবে ‘হৃদয়ের কথা’ নামে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী রিয়াজ

ও পূর্ণিমা অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে অত্যন্ত সফল হয়েছিলো। এছাড়াও কাজী রিটন আরও কিছু জনপ্রিয় নাটক প্রযোজনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে ধারাবাহিক নাটক ‘বিবর্ণ ভালোবাসা’ (এনটিভি), ‘কাছ দূরে’ (বাংলা ভিশন), ‘নীড়ে নির্বাসন’ (বিটিভি), এবং এক ঘন্টার নাটক ‘অত্রি’ (দেশ টিভি), ‘প্রত্যাগত’ (বিটিভি), ‘শুভ’ (আরটিভি) ইত্যাদি।

বর্তমানে কাজী রিটন তার নিজের প্রতিষ্ঠান ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’-এর ব্যানারে আরো কিছু মানসম্পন্ন নাটক ও টেলিছবি প্রযোজনা করেছেন, যেমন ‘ছায়া শিকারী’ (২০২১) মাছরাঙ্গা টেলিভিশন, ‘শহরনামা’ (২০২১) মাছরাঙ্গা টেলিভিশন, ‘খচাই’ (২০২১) বাংলাভিশন, ‘প্রেম ৭১’ (২০২০) মাছরাঙ্গা টেলিভিশন, ‘মনে মনে’ (২০২০) মাছরাঙ্গা টেলিভিশন, ‘গল্প নয়’ (২০২০) এনটিভি, ‘আপা’ (২০১৯) একুশে টেলিভিশন, ‘টম এন্ড জেরী’ (২০১৯) এটিএন বাংলা, ‘ব্যাড ম্যান’ (২০১৯) এশিয়ান টিভি, ‘ওপারে তুমি’ (আরটিভি) , ‘সায়েন্সের মেয়ে আটসের ছেলে’ (২০১৮) এটিএন (চ্যানেল আই), ‘গোলমাল’ (বিটিভি), ‘ফেরারী’ (চ্যানেল আই), ‘ঝরা ফুল’ (এটিএন), ‘মেয়ে থাকে স্কটল্যান্ডে’ (বিটিভি), ‘ভ্যাগাবন্ড’ (আরটিভি), ‘মানুষ মহাজন’ (দিগন্ত টিভি), ‘রান’ (আরটিভি), কাজী রিটন লেখক হিসাবে ‘আপা’ (২০১৯), লেখক ও পরিচালক হিসেবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দ্বিধা’ (২০০৭), এবং ‘অন্তরীক্ষ’ (২০০৯), নির্মাণ করেন।

এসবের পাশাপাশি তিনি ‘কাজী নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে কাজী রিটন বেশ কিছু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশের মিডিয়া শিল্পকে দেশে ও বিদেশে এগিয়ে নেয়ার লক্ষে তিনি অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছেন।

Ad